তিন খণ্ডে সমাপ্ত, শুভদীপ বড়ুয়ার উপন্যাস ‘নিঃশব্দ পাহাড়’-এর কেন্দ্র আফঘানিস্তান হলেও এর পটভূমি সারা পৃথিবী। সময়ের আবর্তনে খ্রিস্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর থেকে অতি সাম্প্রতিক কাল। এই উপন্যাসের পরতে পরতে রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি, ধর্ম, মিথ, জীবন ও ইতিহাসের প্রবল দোলাচল। আর আছে এক দাবা-সাংবাদিকের রুদ্ধশ্বাস জীবন ও প্রেম। মার্কিন ক্রীড়া-সাংবাদিক স্যাম পিটার্স জরুরি অবস্থা চলাকালীন আফগানিস্তানে প্রবেশ আর তার প্রতীক্ষায় থাকা একাকিনী আফগান-তরুণী, এদের দুজনের জীবনে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার পারম্পরিকতা এবং দীর্ঘকালীন যুদ্ধে এলোমেলো হয়ে যাওয়া আফগানিস্তানে তাদের দেখা হতে হতেও বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, এর নেপথ্যের ক্রীড়নক ‘সময়’ হলেও, সময়ের চাইতেও অমিত কোনো শক্তির আভাস যেন এই কাহিনিতে। সে কি ইতিহাস স্বয়ং? নাকি সে আদিগন্তহীন এক দাবার বোর্ড, যেখানে অদৃশ্য হাতে চালে ইতিহাসের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বারবার ছিটকে পড়ছে মানুষ৷ পুরনো মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে, সম্পূর্ণ ভিন্ন দেশকালের পটে সে দেখা দিচ্ছে নতুন আত্মপরিচয়ে, নতুন কোনো নামে। বদলে যাচ্ছে অস্তিত্বের প্রাসঙ্গিকতা, সমাজ, দর্শন, আদর্শ, অহং, এবং আধ্যাত্ম। লাহোরের অন্ধকার গলির নর্তকী থেকে সোভিয়েত পলিটব্যুরোর সদস্য, যুদ্ধে পা হারানো আফগান মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে কিংবদন্তী দাবাড়ু ববি ফিশার, সকলেই ইতিহাসের ব্যাপ্তি মেনে অংশ নিয়েছেন এই কাহিনিতে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা ও তার গতিপথ অনুধাবন করতে ‘নিঃশব্দ পাহাড়’-এর কোনো জুড়ি নেই সমগ্র বাংলাসাহিত্যে। লোকশ্রুতি অনুসারে, হিন্দুকুশ পর্বতমালার তুষারে ঢাকা কোনো এক শৃঙ্গের দেহে যেমন মৃত্যুর পর বিলীন হয় মানুষের আত্মা, একের পর এক জমে ওঠা মানব-চেতনার ভারে শৃঙ্গটি যেন নির্বাক, তেমনি বিশ্বব্যাপী অসংখ্য চরিত্রের কথনে, চেতনায়, ইতিহাসে, বাঙ্ময় এই মহাকাব্যিক ট্রিলজি ‘নিঃশব্দ পাহাড়’।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.