বাংলার রেস্তোরাঁয় লুপ্তপ্রায় কেবিন

By:

Format

হার্ডকভার

Country

ভারত

650

ভিড়ের মধ্যে গোপনীয়তা খুঁজে নেওয়ার আবডাল খুঁজতেই রেস্তোরাঁর অন্দরে একদা জন্ম হয়েছিল কেবিন সংস্কৃতির। সুদূর ফ্রান্স থেকে ভারতে তার আমদানি ঔপনিবেশিক আমলে। জনবহুল স্থানে একান্ত ব্যক্তিগত পরিসর রচনা করার উদ্দেশ্যে একইভাবে বক্স চালু হয় সমসাময়িক থিয়েটারগুলিতেও। প্রেক্ষাগৃহ থেকে তাদের বিদায়ঘণ্টা বেজেছে বহুকাল আগে, কিন্তু টিমটিমিয়ে এখনও কিছু পুরনো ভোজনশালায় টিকে রয়েছে কেবিনের সারি। বাড়ির পর্দানসীন মহিলাদের হরেক বিলিতি খাদ্যের সঙ্গে পরিচয় করাতে কাঠের পার্টিশনের আড়ালই বেছে নিতে পছন্দ করতেন একান্নবর্তী পরিবারের কর্তা। আবার ইয়ারদোস্তদের নিয়ে সুখাদ্য ও পানীয় নিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য অস্থায়ী বৈঠকখানার আমেজি পরিবেশ সৃষ্টি করতেও কেবিনের প্রাসঙ্গিকতা ছিল অনস্বীকার্য। ধুরন্ধর ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে স্বদেশি বিপ্লবের নানান গূঢ় মন্ত্রগুপ্তির আতুড়ঘরও হয়ে উঠেছিল রেস্তোরাঁর কেবিন। নিষেধাভাসের ঘেরা টোপে এক শ্রেণির রান্নাকেই দাগিয়ে দেওয়া হল কেবিন স্টাইল রান্না। যা ঘরের না, বিপ্লবের দিকে পা বাড়িয়ে থাকা সেই রেওয়াজ চালু থেকেছিল সত্তর দশকের নকশাল আন্দোলন ইস্তক। আবার, সাহিত্যের পাতায় রহস্যজাল ফাঁদতে রেস্তোরাঁর কেবিন হয়ে উঠেছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। প্রায়ান্ধকার কেবিনের অন্দরে কখনও ছদ্মবেশ পাল্টে নিয়েছেন গোয়েন্দা গল্পের দুঁদে প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর, আবার কখনও সেখানে সদলবলে গোপন বৈঠক সারতে দেখা গিয়েছে কোনও আফিমচক্রের সর্দারকে। সমাজের লাল চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে প্রেম নিবেদনের অব্যর্থ ঠিকানা হিসেবেও কেবিনের গুরুত্ব অসীম। ভারি পর্দায় ঢাকা কাঠের চার দেওয়ালের নিভৃত প্রশ্রয়ে ক্রমে প্লেটোনিক প্রেমের সাবলীল শরীরী উত্তরণেরও সাক্ষী থেকেছে কেবিন। এর অবধারিত পরিণতি হিসেবে দেহব্যবসার প্রয়োজন মেটাতেও কেবিনের গুরুত্ব বহাল থেকেছে কিছুকাল। ব্যস্ত রেস্তোরাঁর কোলাহলের মাঝেও আজীবন গোপনীয়তার শপথ নেওয়া কেবিন তার স্বাতন্ত্র বজায় রেখেছে চিরকাল। তার আলো-ছায়া মাখা মায়াবী পরিবেশে যেন চেনামুখের মুখোস খসে পড়ে, কাচের গ্লাসে যেন আরও গাঢ় হয়ে ওঠে পানীয়ের রং, এমনকী বদলে যায় ওয়েটারের দৃষ্টি, দেহভঙ্গিও। এসবই কি দৃষ্টিভ্রম মাত্র, না কি বাস্তবেও ঘটমান? কেবিনের টানা পর্দার বাইরে যুগে যুগে তাই দানা বেঁধেছে কৌতূহলের কণা, জমে উঠেছে প্রশ্নের স্তূপ।

বাংলার রেস্তোরাঁয় বিলুপ্তপ্রায় কেবিন। সম্পাদনা সামরান হুদা, দামু মুখোপাধ্যায়। মিলটন ভট্টাচার্য চিত্রিত।