বাংলা কী লিখবেন কেন লিখবেন

By:

Format

হার্ডকভার

Country

ভারত

275

‘বাংলা কী লিখবেন কেন লিখবেন’ বইয়ের ফ্লাপে লেখা কথাঃ
আপনি বঙ্গভাষার লেখক । কিন্তু যে বাংলা আপনি লেখেন, তা কি পুরোপুরি নির্ভুল? কোথায় ‘অনুপস্থিতিতে’ লিখতে হবে আর কোথায় ‘অবর্তমানে’, তা কি আপনি জানেন? কিংবা কোথায় ‘উদ্দেশে’ আর কোথায় ‘উদ্দেশ্যে’? না জানলেও ভাবনার কিছু নেই। কেননা, শব্দপ্রয়োগের ব্যাপারে কোনও সমস্যা দেখা দিলে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের কমীরা যার উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নেন, সেই ব্যবহার-বিধির সাহায্য এবারে আপনিও পাচ্ছেন।
এ বই শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, বাংলা ভাষায় যাঁরা লেখালিখি করেন, তাঁদের সবার জন্য| আদ্যন্ত ঝরঝরে সরস বাংলায় লেখা। যাতে পড়বামাত্ৰ বোঝা যায় যে, কী লিখতে বলা হচ্ছে ও কেন লিখতে বলা হচ্ছে। এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে এমন সব ভুলত্রুটির দৃষ্টান্ত, যা আমরা আকছার ঘটতে দেখি, অথচ যৎসামান্য সতর্ক ও যত্নশীল হলেই যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
এখানে আছে ভাষা ব্যবহার, বাক্য গঠন ও শব্দ নির্বাচন সম্পর্কে নানা জরুরি পরামর্শ। আছে তর্জমা, প্রতিবেদন, অনুচ্ছেদ বিভাজন, কপি লেখা, সংবাদ বাছাই করা ও শিরোনাম রচনার আদর্শ রীতি নিয়ে প্রয়োজনীয় পথনির্দেশও। আছে কালনির্ণয়, বর্ষপঞ্জি, বিভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা, পরিমাপ, সংখ্যার সমস্যা, প্রতিবর্ণীকরণ, প্রুফ সংশোধন, হরফের আকার ও বৈচিত্ৰ্য, স্থান-নাম ও ব্যক্তি-নাম ইত্যাদি নানা বিষয়ের আলোচনা|
আর আছে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রস্তাবিত বানান-বিধি, ইতিমধ্যেই যা গুণিজনদের অনুমোদন ও সমর্থন পেয়েছে। উপরন্তু সমস্ত তথ্যই এখানে বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে খুব সহজেই আপনার তাবৎ প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যান। ‘কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ একেবারে অন্য ধরনের কোষগ্রন্থ। এমন বই বাংলা ভাষায় এর আগে আর বার হয়নি। নির্ভুল বাংলা যাঁরা লিখতে চান, এ বই তাঁদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবার যোগ্য।

সূচিপত্রঃ
* ভূমিকা ৭
* বানান-বিধি ৯
* বর্ণানুক্রমিক আলোচনা : বিষয় ও শব্দাবলি ২১
* নির্দেশিকা ২১১

দ্বিতীয় সংস্করণ সম্পর্কে
গ্ৰন্থখানি পাঠকসমাজে আদৃত হয়েছে, একেই আমাদের পরিশ্রমের সবচেয়ে বড় পুরস্কার বলে গণ্য করি।
নাম-বিশেষ্য ‘চিন’-এর বানান নিয়ে কেউ-কেউ আপত্তি তুলেছেন। তাঁরা বলেছেন, চীন সংস্কৃত শব্দ। যুক্তি হিসাবে তাঁরা দেখিয়ে দিচ্ছেন চীনাংশুক শব্দটিকে, এবং বলছেন যে, এই কারণেই এ-ক্ষেত্রে বানানের পরিবর্তন ঘটানো উচিত হবে না।
আমাদের বক্তব্য: সংস্কৃত ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও চীন মূলত সংস্কৃত শব্দ নয়। মূল শব্দটি বহিরাগত। অধ্যাপক থান য়ুন-শন বলছেন, তাঁর দেশের “‘চীন’ নামটির উৎপত্তি ‘চিন’ থেকে। চৌ বংশের রাজত্বকালে (খ্রিস্টপূর্ব ১১২২-২৪৯) ‘চিন’ একটি করদ রাজ্য ছিল…। প্রথমে এই রাজ্যটিও উঠে আশেপাশের রাজ্যগুলিকে জয় করে সমগ্ৰ দেশকে একতাবদ্ধ করল। এই রাজ্যের রাজবংশের নামও দেশের নাম অনুযায়ী হল ‘চিন’।” (‘আধুনিক চীন’, পৃ:8)
‘চীন’ তা হলে ‘চিন’-এরই প্রতিবর্ণীকৃত সংস্করণ মাত্র, তাকে সংস্কৃত শব্দ বলে গণ্য করা চলে না। ‘চীনাংশুক ও বস্তুত একটি বিদেশি শব্দের সঙ্গে একটি সংস্কৃত শব্দের (অংশুক) মিশ্রণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এ-রকম মিশ্রণ বাংলা ভাষাতেও অনেক ঘটেছে। দৃষ্টান্ত : ‘ইংলণ্ডেশ্বরী’।
গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণে অবশ্য কিছু অসংগতি থেকে গিয়েছিল। শ্ৰীশঙ্খ ঘোষকে ধন্যবাদ, সেগুলির প্রতি তিনি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই সংস্করণে অসংগতিগুলি মেটানো হল। তা ছাড়া, গ্ৰন্থখানিকে ত্রুটিহীন করবার জন্য ইতস্তত আরও কিছু পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে ও নূতন কিছু শব্দও এই সংস্করণে যুক্ত হয়েছে।

যা মনে রাখা দরকার
সব ভাষারই আছে দুটি স্তর। একটি সরল, অন্যটি কঠিন। সরল ভাষার তুলনায় কঠিন ভাষার নাগাল অনেক সীমাবদ্ধ। যা ছাপা হয়, তার ভাষা যদি হয় কঠিন স্তরের, এই সীমাবদ্ধতার কারণেই তা বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে পৌঁছতে পারে না। লক্ষ্য যেখানে বৃহত্তর পাঠকসমাজ, ভাষা সেখানে সরল হওয়াই চাই।
* ভাষা সরল হবে, কিন্তু তরল হবে না। উচ্ছাস ও কাব্যিকতা পরিহার্য। উচ্ছাস ভাষাকে আবিল করে। কাব্যিকতাকে প্রশ্রয় দিলে গদ্যভাষা এলিয়ে যায়।
* বক্তব্য এমনভাবে প্ৰকাশ করুন, বাংলা ভাষার স্বাভাবিক প্ৰকাশারীতির সঙ্গে যাতে তার কোনও বিরোধ না ঘটে।
* নিরলঙ্কার গদ্যই সংবাদপত্রের পক্ষে আদর্শ গদ্য। যা বলবার, সরাসরি বলুন, এবং এমন ভাষায় বলুন, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভাষা। মনে রাখুন, ‘প্ৰত্যুষ পাঁচ ঘটিকায় তাঁর জীবনদীপ নির্বাপিত হয়’ না লিখে ‘ভোর পাঁচটায় তিনি মারা যান’ লিখলে মৃতের প্রতি কোনও অশ্রদ্ধা সূচিত হয় না।
* প্রতিবেদন বা রিপোর্ট মন্তব্যবর্জিত হবে। প্রতিবেদকের কাছে এটাও প্রত্যাশিত যে, পারতপক্ষে এমন কোনও শব্দ তিনি ব্যবহার করবেন না, তাঁর রচনাকে যার ফলে পক্ষপাতদুষ্ট বা অভিসন্ধিমূলক বলে মনে হয়।
* খবরের মুখপাত বা সূচনাংশ (ইনট্রো) হবে সহজ, স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও সংক্ষিপ্ত। মনে রাখুন, এটির দ্বারা আকৃষ্ট হলে তবেই একজন পাঠক গোটা খবরটি পড়তে উৎসাহী হবেন।
* তর্জমার ভাষা পুষ্পিত হবে না, কিন্তু স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল হবে।
* কঠিন শব্দ পরিহার করুন। শার্দূলের গর্জনের চেয়ে বাঘের হালুম কিছু কম ভয়ঙ্গর নয়। কঠিন পরিভাষা ব্যবহার করবেন না। জার্গন পাঠককে দূরে ঠেলে দেয়।
* বাক্যগঠনে কর্তৃবাচ্যকে প্রাধান্য দিন।