ফেরদৌসীর : শাহনামা ১ম খণ্ড

By:

Format

হার্ডকভার

Country

বাংলাদেশ

Original price was: 450₹.Current price is: 449₹.

বইটি বর্তমানে আমাদের সংগ্রহে নেই। আপনি বইটি প্রি-অর্ডার করলে প্রকাশনায় মুদ্রিত থাকা সাপেক্ষে ৪-৮ সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি করা হবে।

“ফেরদৌসীর : শাহনামা ১ম খণ্ড” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
ইরানের জাতীয় মহাকাব্য – তাঁদের ভাষায়, শাহনামে আমরা বলি শাহনামা। নাম থেকেই বােঝা যায় এটি রাজাবাদশাহদের কাহিনি। এই সৌধপ্রতিম মহাকাব্যটি রচনা করেন ইরানের মহাকবি ফেরদৌসী, আনুমানিক ৯৭৭ থেকে ১০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। কোনাে কোনাে গবেষক অবশ্য আরও সুস্পষ্ট দিন-তারিখ নির্ধারণ করে বলেছেন, ফেরদৌসী এই অবিস্মরণীয় মহাকাব্য রচনা শুরু করেন ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে এবং শেষ করেন ৮ই মার্চ ১০১০ খ্রিস্টাব্দে। শাহনামা ষাট হাজার পঙক্তির বিশাল ও অমূল্য রত্নপ্রতিম গ্রন্থ। ২০১০ সালে এ গ্রন্থের সহস্রবর্ষ পূর্ণ হলেও সারাবিশ্বে এর আবেদন এখনাে একটুও কমেনি। শাহনামাকে বলা যায়, মহৎ কবিতা এবং জাতীয় ইতিহাস পুনর্নির্মাণচর্চার একটি তুলনারহিত সৃজন। কারণ, এতে ইরানের প্রাচীন ইতিহাসের একটি অনুপুঙ্খ কাব্যিক পুনর্নির্মাণই ছিল কবির অভীষ্ট লক্ষ্য। এ ধরনের কাজে পূর্বসূরিদের প্রয়াসকে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে নবরূপ দিতে হয়।
ফেরদৌসী ইতিহাসের দিকে চোখ রেখে সৃজনপটু দক্ষতায় সে কাজ সম্পন্ন করেছেন। এই কাব্যগ্রন্থের একটি অংশ ফেরদৌসীর স্বকীয় সৃজন-উৎস থেকে উদ্ভাবিত। অন্যদিকে, সমকালীন গদ্য লেখকদের, বিশেষ করে আবু মনসুর দাকিকির (Abu Mansur Daqiqi) রচনাকে তিনি বেছে নেন বীজসূত্র হিসাবে, বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন। শাহনামার ইতিহাস পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে সপ্তম শতাব্দীতে পারস্যে ইসলামের বিজয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত। শাহনামা প্রধানত ইরানের পৌরাণিক, বীরত্বব্যঞ্জক এবং ঐতিহাসিক যুগসমূহের কীর্তিগাথাকে সমন্বিত করে বিশাল প্রেক্ষাপটে মানবিক আবেদন এবং শাশ্বত মূল্যচেতনাঋদ্ধ মহৎ সাহিত্যিক মাস্টার পিস। শাহনামা ইরানের জাতিতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় এবং ইতিহাসের কালক্রমিক অভিযাত্রায় তুর্কমুঘলসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জাতি-পরিচয়কেও ধারণ করেছে। এ বিবেচনায় এটি বহুসংস্কৃতিকে আত্মস্থ করা এক বিশ্ব-মহাকাব্যেরই অন্তর্ভুক্ত। শাহনামার কাহিনিসূত্র শুরু হয়েছে মধ্যযুগের উপান্তকালের ফারসি বা পাহলভি ভাষায় রচিত x’at aynam ak (Book of Kings) থেকে। এটি মূলত পারস্যের কিংবদন্তিকালের কাহিনি থেকে শুরু হয়ে দ্বিতীয় Khosrau’র (590-628) রাজত্বকাল পর্যন্ত বিস্তৃত।
ফেরদৌসী এই কালের সঙ্গে মধ্যযুগের সপ্তম শতাব্দী অর্থাৎ আরবের ইরান বিজয় পর্যন্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। ফেরদৌসী সমকালীন গদ্য লেখকদের বিশেষ করে আবু মনসুর দাকিকির রচনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবে দাকিকি মাত্র হাজার পঙক্তি লেখার পরেই মৃত্যুবরণ করেন। ফেরদৌসী দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে এই বিপুল আয়তনের কাব্যে যে অসামান্য কাব্যকীর্তি নির্মাণ করেন। তা যেকোনাে সুপণ্ডিত পাঠককেও অভিভূত করে। দাকিকি Zoroaster-এর উত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ফেরদৌসী দাকিকির কাছে ঋণ স্বীকার করেন। নিজ রচনায় অন্তর্ভুক্ত করেন ৬২টি আখ্যান, ৯৯০টি অধ্যায় এবং ৬০০০০ পঙক্তি। এ এক বিস্ময়কর শক্তির পরিচায়ক। প্রাচীন ইতিহাসনির্ভর মহাকাব্যে মৌখিক এবং লিখিত সাহিত্যের যে পরস্পর প্রবিষ্ট সাহিত্যশৈলী লক্ষ করা যায়। শাহনামায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শাহনামা প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশধারা সংক্রান্ত এক অতুলনীয় আকর গ্রন্থ। প্রাক-ইতিহাস, ইরান ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের সভ্যতা বিকাশের নানা উপাদান। যেমন- আগুনের ব্যবহার, রান্নাবান্না, আইনকানুন ও সামাজিক বিধিবিধানসহ বহু বিষয় এতে যুক্ত হয়েছে।
এ গ্রন্থে মােটামুটিভাবে কালক্ৰমিক ইতিহাস এবং মানব সমাজের ইতিহাসের ধারায় পথচলার নানা মূল্যবান বিবরণ পাওয়া যায়। এই গ্রন্থের কোনাে কোনাে চরিত্রের জীবক্তাল হাজার বছরের সময়কালে পরিব্যাপ্ত। এঁদের অনেকেই আবার একেবারেই সাধারণ মানুষ। ইতিহাস এবং কিংবদন্তির পরস্পর প্রবিষ্টতা এর ঘটনাপ্রবাহকে কৌতূহলােদ্দীপক ও আকর্ষণীয় করেছে এবং অনন্যতা দিয়েছে। ফেরদৌসীর চরিত্রসমূহ জটিল; তবে প্রাণবন্ত। কোনাে চরিত্রই আদিকল্প (Archetypal) বা পুতুলপ্রতিম নয়। এর শ্রেষ্ঠ এবং সর্বগুণে গুণান্বিত চরিত্রেও বিচ্যুতি আছে, আবার কুখ্যাত চরিত্রেও আছে মানবতার ছোঁয়া। এখানেই এই বইয়ের বিশ্বমানবিক আবেদন। তুর্কি ও আরবদের কাছে পারস্য সাম্রাজ্যের পতনে ফেরদৌসী বেদনার্ত হয়েছেন। তাঁর সেই গভীর বেদনা থেকেই পারস্যের স্বর্ণযুগের ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছে দিয়ে ফেরদৌসী একটি উন্নত পৃথিবী নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। ফেরদৌসী ইতিহাসনিষ্ঠ কাব্যনির্মাতা। পাঠকেরা তাঁর বইয়ে ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা উদ্দেশ্যহীনভাবে পড়ে যাবেন এমনটি তিনি চাননি। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর পাঠকেরা তাঁর বইয়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ জটিল ও বহুমুখী ধারাপ্রবাহ সতর্কতার সঙ্গে অনুধাবন করবেন এবং রাজা-রাজবংশ-ব্যক্তি বা কোনাে রাষ্ট্রের কেন পতন ঘটে তা-ও তাঁর এই মহৎ গ্রন্থ থেকে বুঝে নেবেন এবং এর মধ্য দিয়ে বিশ্বসভ্যতার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে একটি নতুন পৃথিবী নির্মাণে প্রয়াসী হবেন।
তিনি যে জায়গাটায় জোর দিয়েছিলেন তা হলাে এই পৃথিবী চলমান এবং এই পৃথিবীতে মানুষ ইতিহাসের পথে যুগযুগান্তের পথপরিক্রমায় আসে আর যায়। সেজন্যই তাদের বিজ্ঞতার সঙ্গে নিষ্ঠুরতা, মিথ্যাচার এবং সমস্ত অশুভ কল্পনা বর্জন করে সুবিচার, সত্য, ন্যায়, শৃঙ্খলা এবং অন্যান্য গুণ অর্জন করে বিশ্বসভ্যতায় তার ছাপ রেখে যাবে। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে শাহনামার একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে। এটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন টি. ম্যাকান। সতেরটি পাণ্ডুলিপির তুলনামূলক যৌগিক সম্পাদনার মাধ্যমে এটি প্রস্তুত করা হয়। ফ্রান্স, রাশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে শাহনামার বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হলেও ভারতবর্ষের অন্য কোনাে অঞ্চলে এর পূর্ণাঙ্গ, সুসম্পাদিত সংকলনের খবর আমরা পাইনি। তবে মুঘল সম্রাটরা এ বইটি গুরুত্বের সঙ্গে পড়তেন তার প্রমাণ আছে বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান প্রমুখের শাহনামার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে। প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর শাহনামা থেকে কিছু পঙক্তি উদ্ধৃত করেছিলেন। বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁও শাহনামা পাঠ করে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন এমন সংবাদ জানা যায়।
Writer

Translator

Publisher

ISBN

9840750267

Genre

Pages

683

Published

Reprind, 2012

Language

বাংলা

Country

বাংলাদেশ

Format

হার্ডকভার