শরদিন্দু অমনিবাস ৪

By:

Format

হার্ডকভার

Country

ভারত

500

মানুষের গল্প বলার অভ্যাস আজকের নয়। মানুষ যেদিন থেকে কথা বলতে শিখেছে সেদিন থেকেই সে নিজের ছেলেমেয়েদের গল্প শােনাতে শুরু করে দিয়েছে। আদিম কালে মানুষ গুহায় বাস করত। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, গুহার ভিতর আগুন জ্বলছে, পুরুষেরা তখনও শিকার থেকে ফেরেনি। ছােট-ছােট ছেলেমেয়েদের ক্ষিদে পেয়েছে, ঘুম পেয়েছে। মা তাদের কাছে টেনে নিয়ে বলেন- গল্প বলি শােন। এক যে ছিল বাঘ।

প্রথমে গল্প বলতেন মা ঠাকুরমা। তারপর কত হাজার বছর কেটে গেল, এলেন বিষ্ণুশর্মা, ঈশপ। তাঁরাও জীবজন্তু, পশুপক্ষী নিয়ে গল্প বললেন। ক্রমে আলাদিনের প্রদীপ জ্বলে উঠল, বেতালের নৃত্য শুরু হল। গল্পের আসরে প্রবশ করল ভূত-প্রেত দৈত্য-দানব পরী-হুরী । কত চমকপ্রদ লােমহর্ষক উপকথা তৈরি হল। পৃথিবীর আদিম গল্প তৈরি হয়েছিল শিশুদের জন্যে, আজও গল্প রচিত হচ্ছে। শিশুদের জন্যে। শিশুদের গল্প শােনার আগ্রহে বিরাম নেই।

শিশুদের গল্প শােনানাে কিন্তু সহজ কথা নয়। শিশুরা বােঝে কোন গল্পটা ভাল, কোনটা মন্দ। যে গল্প তাদের ভাল লাগে সেটা তারা বারবার শুনতে চায়। গল্পের প্রত্যেকটি কথা তাদের মুখস্থ হয়ে যায়, একটু এদিক-ওদিক হবার জো নেই। যাঁরা গল্প বলেন তাঁদের খুব সাবধানে বলতে হয়। গল্প সকলে বলতে পারেন না, বিশেষত শিশুদের গল্প। যাঁরা বয়সে বড় হয়েও নিজেদের শৈশবকাল ভুলে যাননি তাঁরাই শিশুদের গল্প বলতে পারেন। তাঁরা জানেন শিশুর মন কী চায়, কিসে আনন্দ পায়। শিশুরা যখন একটু বড় হয়ে কৈশােরে পদার্পণ করে তখন আবার তাদের গল্পের চাহিদা বদলে যায়। তখন আর বাঘ-ভালুক বুদ্ধ-ভূতুম ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর গল্পে মন ভরে না। জীবনের সঙ্গে পরিচয় শুরু হয়েছে, জীবনের অফুরন্ত সম্ভাবনা চোখের দৃষ্টিকে রঙিন করে তুলেছে। তারা চায় অ্যাডভেঞ্চার, বিজ্ঞান-বিচিত্র কাহিনী, নূতনত্বের স্বাদ, রােমান্সের গন্ধ। মানুষের জীবন যে কত রহস্যময় কত রােমাঞ্চকর, তাই তারা সারা মন দিয়ে অনুভব করতে চায়। তারপর কৈশাের পেরিয়ে যখন তারা যৌবনে উপনীত হয় তখনও তাদের গল্পের নেশা কাটে না। কর্মজীবনে শৈশব কৈশােরের গল্পজগৎকে তারা বাস্তব গড়ে উঠেছে তাকে মূর্ত করে তােলে। আবার বুড়াে বয়সে যখন কর্মশক্তি শেষ হয়ে আসে তখন ছােট-ছােট নাতি-নাতনিকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে বলে- ‘গল্প শােন। এক যে ছিল রাজা।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়