“শ্রীসুভাষচন্দ্র বসু সমগ্র রচনাবলী ১ম খণ্ড” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ভারত ভূখণ্ডের মুক্তিপরষ নেতাজী সুভাষচন্দ্রের অসামান্য জীবন জাতীয় আন্দোলনের অধ্যায় থেকে অধ্যায়ে বিস্তৃত। কর্মময় জীবনের বিভিন্ন অংশ দেশ থেকে দেশান্তরে পরিব্যাপ্ত। তিনি শুধু আদর্শ নেতা বা বাগ্মী ছিলেন না, ছিলেন দার্শনিক, চিন্তানায়ক, শক্তিশালী লেখক। জীবনের বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন অবস্থায়, বিভিন্ন দেশে বসে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অসংখ্য রচনা এমন ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যা একত্র করে সমগ্র রচনাবলীর আকারে প্রকাশ করা নিঃসন্দেহে একটি দুরূহ গবেষণাসাপেক্ষ কাজ। ১৯৫৭ সালে নেতাজী ভবনে নেতাজী রিসার্চ ব্যুরাে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই নেতাজীর বহুমুখী জীবনের সমগ্র চিত্রটি ধীরে ধীরে সুসংবদ্ধ ভাবে গড়ে উঠেছে। বিগত দুটি দশক ধরে দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে সুভাষচন্দ্রের বিবিধ রচনা, বক্তৃতা, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র, বিবৃতি, দলিল প্রভৃতি সংগৃহীত হয়েছে, সম্পাদিত হয়েছে। বিক্ষিপ্ত এই রচনা সম্ভার। অতঃপর রচনাবলীর আকারে প্রকাশিত হতে চলেছে। কয়েকটি খণ্ডে এই রচনাসমগ্র সম্পূর্ণ হবে। সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে কাজটি শুরু করতে পেরে আমাদের মহৎ জাতীয় কর্তব্যের সূচনা অবশ্যই তৃপ্তিদায়ক। রচনাবলীর প্রথম খণ্ডের বিন্যাস সম্পর্কে দু-চার কথা বলার প্রয়ােজন আছে। প্রথম ভাগঃ এই ভাগে আছে তাঁর অনন্যরচনা ‘ভারত পথিক’। ভারত পথিক সুভাষের অসমাপ্ত আত্মজীবনী। শৈশবে শুরু, ইংলণ্ডে ছাত্র জীবনে শেষ। চিন্তায়, কর্মে, জীবনের ক্রমবিকাশের ধারা যে দিগন্তের ইঙ্গিত দিতে চায় এই গ্রন্থে সেই মহৎ জীবনদিগন্তের উন্মােচন। শুধু নিজের জীবন নয় তৎকালীন বাঙালী সমাজ ও বাঙালী নবজাগরণের একটি সুন্দর চিত্রও পাওয়া যায় এই রচনায়। দ্বিতীয় ভাগঃ এই ভাগে সন্নিবেশিত। হয়েছে সুভাষচন্দ্রের দু’শ আটটি চিঠি। কৈশােরে মাতা প্রভাবতী ও মেজদাদা শরৎচন্দ্রকে লেখা চিঠি দিয়ে শুরু করে ১৯২৭ সালের প্রথমে মান্দালয় জেল থেকে মুক্তি পাবার প্রাক্কালে মেজদাদাকে লেখা চিঠি দিয়ে এই বিভাগটি শেষ করা হয়েছে। বিশেষ উল্লেখ যােগ্য : ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে শরৎচন্দ্র বসুকে লেখা সাতখানি চিঠি এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি এই প্রথম সম্পূর্ণভাবে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। সুভাষচন্দ্রের মানসিকতার বিকাশধারা উপলব্ধি করার জন্যে এই হৃদয়গ্রাহী চিঠি গুলি একান্তই অপরিহার্য। ব্যক্তিগত সমস্যাবলী, দর্শন ও আদশগত নানা প্রশ্নে এই পত্রগুচ্ছ আকর্ষণীয়। আত্মজীবনী এবং এই পত্রগুচ্ছ পাশাপাশি পড়ার সুযোগ যে কোন মননশীল পাঠকের কাছে এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। তৃতীয় ভাগঃ দ্বিতীয় দশকের প্রথমে সুভাষচন্দ্র যখন জনসেবায় আত্মনিয়ােগ করেন তখনই তাঁর আদর্শগত বিকাশ অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। নবজাগ্রত ভারতের তারণ্যের প্রতীক তিনি তাে ছিলেনই, আসন্ন জাতীয় বিপ্লবের কাণ্ডারীর রূপে অনেকেই তাঁর মধ্যে তখনই প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এই খণ্ডে আছে সেই সময়ের বিবিধ রচনা। সুভাষ-জীবনের এই ঘটনাবহুল উন্মেষ কালেই উপ্ত হয়েছিল ভবিষ্যত নেতার বীজ। পরবর্তীকালে আসমুদ্র হিমাচলের মানুষকে যে নেতা বেধে ফেলেছিলেন আদর্শের জালে। সেই মর্মস্পশী আহ্বান, সেই স্বপ্নের ভারতকে কল্যাণময়ী রূপে গড়ে তােলার ব্রত। তৃতীয় ভাগ সেই কারণে অত্যন্ত উল্লেখযােগ্য। চতুর্থ ভাগঃ এই ভাগটি হল এই খণ্ডের পরিশিষ্ট। এই ভাগের রচনাগুলি তথ্যভিত্তিক। আত্মজীবনী, পত্রাবলী ও বিবিধ প্রবন্ধ সংগ্রহের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হবে। | সুভাষচন্দ্রের পরবর্তী জীবনের রচনা সমূহ সময়ে প্রকাশিত হবে খণ্ডাকারে। জাতীয় জীবনের প্রাণপুরুষ নেতাজী সবযুগের মানুষের মনের অসীম প্রেরণা। সেই প্রেরণার বাণী একত্রে সংগ্রহ করে প্রকাশের বিশাল দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারলে আমরা ধন্য হব।